ফাহাম আব্দুস সালাম বাঙালিদের পান্তানুভূতিতে আঘাত করে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। উনার পোস্টের প্রতিউত্তর দিয়ে, আমার লিস্টের রাসেল রায়হান ভাইয়া একটা পোস্ট দিয়েছেন। ওই পোস্টে আমি একটা লম্বা কমেন্ট করেছি। কমেন্টটাতে উঠে এসেছে আমাদের হারানো শৈশব এর স্মৃতি রোমন্থন! আমার মনে হয়, কমেন্টটা অনেকের পড়ার উপযোগী! অনেকে রিলেট করতে পারবেন, অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে পাররেন! তাই, লেখাটাকে আর্কাইভ করতে, আমার এই ব্যক্তিগত সাইটে পোস্ট করে রাখলাম। নব্বই দশকের বাচ্চারা, নিজেদের শৈশব থেকে ঘুরে আসতে চাইলে লেখাটা পড়তে পারেন। তো, চলুন শুরু করা যাক!
আমাদের হারানো শৈশব
“উনার প্রশ্ন আর আপনার উত্তর পড়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে! কী দারুণ একটা শৈশব-কৈশোর পেরিয়েছি আমি!
আমাদের গ্রাম একদম অজপাড়া গাঁ! আমার শৈশব কেটেছে প্রথমে চন্দনাইশে নানাবাড়িতে [গ্রাম-শহর মিক্সড ; মফস্বল বলা যায়!]। এরপর নিজেদের পটিয়া উপজেলার ভাড়া বাসায়। ভাড়া বাসা হলেও ওটাও অনেকটা গ্রাম ছিল। আবার একটু হেঁটে এগুলে সামনে শহরের মতো। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হতো স্কুল বন্ধ দিলে, ইদে, আমাদের ওরসে [মাজারের ওরস]। নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি-ভাড়া বাসা, তিন জায়গাতেই উঠানে-মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল, কানামাছি, হাডুডু, লুকোচুরি, মার্বেল, ডাংগুলিসহ বাচ্চাদের কোনো খেলা বাদ দিইনি! তবে তিনটা জিনিস বন্ধুরা পারলেও আমি মিস করেছি, গাছে চড়া, সাঁতার [আমি সাঁতার না জানলেও পুকুরে গোসল করা মিস করি না], ঘুড়ি উড়ানো!
এই তো গেল খেলাধুলা। মাটির পুতুল, নাগরদোলা, ঐতিহ্যবাহী খাবার এগুলোর স্বাদ নিয়েছি, আমাদের মাজারের ওরসের মেলায়, মন্দিরের মচ্ছপ মেলায়। আমাদের ওখানে বৈশাখী মেলা বড়ো পরিসরে হয় না! কিন্তু, প্রতিবছর শীতে, বিভিন্ন মাজারে ওরস এর মেলা বসে! আর পারিবারিক কারণে মন্দিরের মেলায় যেতে না দিলেও, অনেকবার চুরি করে গিয়েছি। আমার মনে হয়ে এই মেলাগুলোর স্মৃতি যারা পায়নি, তাদের জীবন নন্দলালের মতো অনেকটাই বৃথা!
#আরও পড়ুন » যে কুয়াশা, সকাল এনেছিল!
আর পান্তা ভাতও আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ। পরিবারের সবাই পছন্দ করে। পান্তাভাত ছোটোবেলা থেকে এখনো খাই সবাই। শুধু আমাদের পরিবার না, আমার নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি, ভাড়া বাসার এরিয়ায় ম্যাক্সিমাম ফ্যামিলিতে পান্তা খেত, পছন্দ করত। তবে এখন তো সবাই বড়োলোক হয়ে গেছে, এখন ফাহাম সাহেবের মতো নাক সিটকায় কিনা জানি না!
কলেজে উঠে, আমাকে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতে হয়েছে! ফলে ধীরে ধীরে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিও হারিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম শহরে লালদিঘীর মেলা ছাড়া আর কোনো বড়ো মেলা হয় না!
ভার্সিটিতে উঠার পর থেকে ঢাকাতেই চলে এলাম! ঢাকা আসার পর থেকে ৬-৭ বছর ধরে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন। আমাদের গ্রামে ওরস দুটো হয়, একটা আমাদের পারিবারিক [আমার বড়োআব্বুর (দাদার চাচা)], আরেকটা এলাকার। গত ৫ বছরে ব্যস্ততার জন্য একটাতেও অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। আর লাস্ট দুই বছর ধরে নাকি এলাকায় গ্যাঞ্জামের কারণে ওরসে মেলা বসতে দেওয়া হয়নি। অনেক দোকানি পেশা পালটে ফেলছে বিধায়, মেলার পরিসর কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
আমি আমার ছেলে-মেয়ে-ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই আপসেট। কারণ, ওরা কেউ আমাদের মতো শৈশব-কৈশোর পাবে না। আমাদের সব ম্যাক্সিমাম খেলার মাঠ এখন হারিয়ে গেছে। আমার নানাবাড়িতে, দাদাবাড়িতে এখন প্রায় ৯৯% বাড়ি পাকা বিল্ডিং হয়ে গেছে, সবাই আগের মতো উঠোন না রেখে, ঘর বড়ো করার জন্য উঠোন ঢুকিয়ে ফেলছে, উঠোনের কাজ পাকা ঘরের ছাদ দিয়ে চালাচ্ছে, কিন্তু আগে যেমন সব ঘরের বাচ্চারা উঠোনে খেলতে পারতাম, এখন অন্যদের ছাদে গিয়ে একসাথে খেলার সুযোগ নেই। ইভেন আমার নানাদেরও বিল্ডিং তুলেছে। সারাদিন গেট অফ থাকে, আমার ছোটো ছোটো মামাতো বোনরা গেটের বাইরে কখনো যায় না, সারাদিন ঘরে জেলবন্দীর মতো কাটায়! ওরা এলাকার অন্য কোনো বাচ্চাকেই চিনে না! আর ওরস মেলার অবস্থা তো ওপরেই বললাম! ওরা সবকিছু থেকে বঞ্চিত!
#আরও পড়ুন » পৃথিবীটা ভালোবাসার হোক, ভালোবাসাময় হোক!
উল্লেখ্য আমি, আপনি আর উনি দুজনের চেয়েও অনেক ছোটো। গ্রামে জন্মানোর উসিলায় ভাগ্যক্রমে এমন শৈশব পেয়েছি হয়তো। ঢাকার পুরোনো প্রজন্মের শৈশবও বর্তমানের মতো ছিল জেনে তো খারাপ লাগছে!”
*****
প্রিয় পাঠক, এই ছিল আমাদের হারানো শৈশব এর স্মৃতি রোমন্থন করে করা কমেন্ট পোস্ট। আশা করি, লেখাটা আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে, তবে নিজের পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও লেখা পড়তে আমাদের ব্লগে যুক্ত থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।